অটিজম আক্রান্ত শিশু যখন হাইপার বা ভয় পায় – অভিভাবকের করণীয়

Published At 2025/Jul/20

লেখকঃ Netcraft Studio

শিশুদের বড় করে তোলা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং, তবে যদি আপনার সন্তান অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD)-এ আক্রান্ত হয়, তবে এই পথ আরও সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। ASD আক্রান্ত শিশুরা অনেক সময় হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায় বা খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা হয়ত শব্দ, আলো, নতুন পরিস্থিতি বা হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে আতঙ্কিত হতে পারে। এই সময়টাতে অভিভাবকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চলুন জেনে নেই কীভাবে আপনি আপনার ASD সন্তানের পাশে থাকতে পারেন যখন তারা হাইপার বা ভয় পায়।


🧠 ১. শিশুর ট্রিগারগুলো চিনে নিন

প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনার সন্তানের আতঙ্ক বা উত্তেজনার কারণগুলো বুঝে ফেলা। কিছু সাধারণ ট্রিগার হতে পারে:

  •  
  • উচ্চ শব্দ (যেমন ফায়ার এলার্ম, গাড়ির হর্ন)
  •  
  • নতুন বা অপরিচিত পরিবেশ
  •  
  • শরীরিক স্পর্শ (যদি তারা স্পর্শ সংবেদনশীল হয়)
  •  
  • দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন

আপনি যদি আগেভাগেই এসব ট্রিগার চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে এগুলো এড়িয়ে চলা সহজ হবে।

🤗 ২. শান্ত থাকার পরিবেশ তৈরি করুন

যখন আপনার শিশু হাইপার বা ভয় পেয়ে যায়, তখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো তাদের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্ত পরিবেশ তৈরি করা। যেমন:

  •  
  • কম আলোয় রাখা
  •  
  • শান্ত মিউজিক বাজানো
  •  
  • তাদের প্রিয় কমফোর্ট আইটেম (যেমন কম্বল, খেলনা) পাশে রাখা

এতে করে তারা একটু স্বস্তি পাবে এবং ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

💬 ৩. শিশুর সঙ্গে ধীরে ও কোমলভাবে কথা বলুন

এই সময়টাতে উচ্চ গলায় কথা বলা বা বকাঝকা করা উল্টো ফল দিতে পারে। পরিবর্তে, কোমল ও ধীরে ধীরে কথা বলুন। যেমন:

"আমি জানি তুমি ভয় পেয়েছো, কিন্তু আমি আছি তোমার পাশে।"

এই ধরনের বাক্য শিশুকে আশ্বস্ত করে এবং আপনার প্রতি তাদের বিশ্বাস বাড়ায়।

👐 ৪. ডিপ প্রেসার থেরাপি ব্যবহার করুন (যদি তারা পছন্দ করে)

অনেক ASD শিশু ডিপ প্রেসার বা জেন্টল হাগ পছন্দ করে। এটা তাদের নার্ভ সিস্টেমকে শান্ত করতে সাহায্য করে। তবে জোর করে কিছু করবেন না। আগে নিশ্চিত হয়ে নিন তারা আদরে স্বস্তি পায় কিনা।

📦 ৫. একটি “Calm Down Kit” তৈরি করে রাখুন

আপনার সন্তান যখন ভয় পায় বা হাইপার হয়, তখন তার জন্য একটি “Calm Down Kit” রাখা খুবই কার্যকর হতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে:

  •  
  • শব্দ কমানো হেডফোন
  •  
  • ফিজেট টয়
  •  
  • প্রিয় ছবি বা বই
  •  
  • সুগন্ধি পাউচ (যদি তারা গন্ধে স্বস্তি পায়)
  •  
  • শান্তিপূর্ণ ভিডিও বা অডিও

📅 ৬. রুটিন মেনে চলুন

ASD শিশুদের জন্য দৈনন্দিন রুটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। রুটিনে নিয়মিততা থাকলে তারা নিরাপদ অনুভব করে এবং হঠাৎ আতঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। রুটিনে যদি কোন পরিবর্তন আনতে হয়, তবে সেটা আগেভাগেই বুঝিয়ে দিন।

🧘 ৭. রেগুলার থেরাপি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিন

যেসব থেরাপি ASD সন্তানের মানসিক ও সেন্সরি কন্ট্রোল বাড়ায়:

  •  
  • অকুপেশনাল থেরাপি
  •  
  • স্পিচ থেরাপি
  •  
  • সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি

এই থেরাপিগুলো আপনার সন্তানের নার্ভ সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ভয় বা উত্তেজনার মুহূর্তে কীভাবে রেসপন্ড করতে হয়, তা শেখায়।


❤️ শেষ কথা

প্রতিটি ASD শিশু আলাদা, এবং তাদের অনুভব ও প্রতিক্রিয়া একে অপরের থেকে ভিন্ন। একজন অভিভাবক হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য, ভালোবাসা এবং বুঝতে চাওয়া। আপনি তাদের সবচেয়ে বড় ভরসা – তাই যখনই তারা ভয় পায় বা হাইপার হয়ে পড়ে, আপনার ভালোবাসা ও সহযোগিতা তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

মনে রাখবেন – আপনি একা নন। পরামর্শ নিতে পারেন বিশেষজ্ঞ, থেরাপিস্ট বা ASD প্যারেন্ট সাপোর্ট গ্রুপ থেকেও।

আপনার অভিজ্ঞতা বা প্রশ্ন কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এই ব্লগটি শেয়ার করুন যাতে অন্য অভিভাবকরাও উপকৃত হন।

#AutismAwareness #ASDParenting #BanglaBlog #SpecialNeedsChild #ParentSupport